মোঃ শফিকুল ইসলাম : সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় চলতি মৌসুমে ভুট্রার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় লাভবান হওয়ার আশা করছে কৃষকেরা। প্রয়াজনীয় সার বীজ, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে কাজিপুরে ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনার স্বপ্ন বুনছেন কৃষকেরা।
উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নে কম বেশী ভূট্রা চাষ হয়েছে।বিশেষ করে চরাঞ্চলের ৬ টি ইউনিয়ন নাটুয়ারপাড়া, খাসরাজবাড়ি, তেকানি, চরগিরিস, নিশ্চিন্তপুর ও মনসুর নগর ইউনিয়নের সারা মাঠ জুড়ে এখন শুধু ভুট্টার উঠতি চারা শোভা পাচ্ছে।ঝিলমিল করে বাতাসে দোলছে ভুট্টার সবুজপাতা। কৃষক অধীর আগ্রহে মনের খুশিতে মাঠে কাজ করছে ফসল ঘরে তোলার জন্য।
এছাড়া মাইজবাড়ি ইউনিয়নের নতুন মাইজবাড়ি, মল্লিকপাড়া, শ্রীপুর, বধুয়ারপাড়া, সুতানারা, কাজিপুর সদর ইউনিয়নে পলাশপুর, সোনামুখি ইউনিয়নের স্থলবাড়ি, রৌহবাড়ি, পাইকপাড়া সোনামুখি, পাঁচগাছি গ্রামে ভুট্টা আবাদ লক্ষ্য করা গেছে।
উপজেলায় অধিকাংশ প্রান্তিক চাষীরা গত কয়েক বছর যাবৎ ভুট্টার চাষ করে আসছে। অন্য ফসলের তুলনায় কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা চাষ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভুট্রা চাষে কীটনাশক ও সেচ তেমন বেশি দিতে হয় না।
বর্তমানে আটার বিকল্প ও গো খাদ্য হিসেবে ভুট্রা ব্যাপক হারে ব্যবহার হচ্ছে। তাছাড়া পোল্ট্রী শিল্পের জন্যও ভুট্রার চাহিদা রয়েছে।বিঘা প্রতি আট থেকে দশ হাজার টাকা খরচ করে চাষীরা ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার ভুট্রা বিক্রী করতে পারে। চলতি মৌসুমে ফলনের আকৃতি ভাল হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি।
চরগিরিশ ইউনিয়নের চরনাটিপাড়া গ্রামের কৃষক রশিদ মন্ডল জানান, ভুট্রার চাষ খুবই লাভজনক।সেচ ও কীটনাশক কম লাগে।আমি চার বিঘা জমিতে ভুট্রা চাষ করেছি খুব ভালো হয়েছে। খাসরাজবাড়ি ইউনিয়নের রাজবাড়ী গ্রামের বকুল জানান এবার ভুট্টা আবাদ ভালো হয়েছে। কোন দুর্যোগ না হলে ফলন ভালো হওয়ায় লাভবান হওয়ার আশা করছি।
এছাড়াও উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও সহযোগীতা করায় ফলন ভালো হয়েছে। আবার ভুট্রা ঘরে তুলার পর জমিতে পাট ও ধানের আবাদ করা যায়। একবিঘা জমিতে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ মন ভুট্রা হয় যা ধানে তুলনায় অনেক বেশী।
চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৮৭৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্রা চাষ হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে এবার আশাতীত ভুট্রা উৎপাদিত হবে।কৃষি বিভাগ ভুট্রার আবাদ বৃদ্ধি করতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষন ও সহোযোতিা করছে।
ফসলের ন্যায্য মুল্য নিশ্চিত করা গেলে কৃষকরা লাভবান হবেন। একই সাথে আগামীতে উপজেলায় ভুট্রার আবাদ আরো বাড়বে এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ঠদের।
কাজিপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে,চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৮৭৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ভুট্টার আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ১৫০ হেক্টর জমিতে এ বছর ভুট্টার আবাদ বেশী হয়েছে। এছাড়া প্রতিবছরই ভুট্টার আবাদ কিছু না কিছু পরিমানে বাড়ছে। নদী বিধৌত কাজিপুরের চরাঞ্চলে ভুট্টার আবাদ বেশী হয়ে থাকে।
শ্রমিক সাশ্রয় সহ খরচ ও তুলনামূলক কম হওয়ার পাশাপাশী বিক্রয়মূল্যে বেশী পাওয়া যায় বলে কৃষকগণলাভজনক ভুট্টা চাষে বেশী ঝুঁকেছে। কাজিপুর কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চরের জমি ভুট্টা চাষে অনুকুল হওয়ায় হেক্টর প্রতি ৯ থেকে সাড়ে ৯ মেট্রিকটন ভুট্টা উৎপাদন হয়ে থাকে। মাজনাবাড়ি স্থানীয় কৃষক আব্দুস সোবহান জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষি অফিসের সঠিক সময়ে বিভিন্ন পরামর্শ পাওয়ায় ভুট্টা বাম্পার ফলন হয়েছে।আমি ৮ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষাবাদ করেছি। খুব ভালো ফলন হয়েছে।
ভুৃট্টা চাষে পানি সার ছাড়া বাড়তি ঝামেলা নাই রোগ বালাই নাই বল্লেই চলে। উৎপাদন খরচের চেয়ে লাভ বেশী হওয়ায় চরের কৃষকরা ভুট্টার চাষে ঝুঁকছে।
কাজিপুর কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রেজাউল করিম জানান, চরের জমি বেলে দোঁআশের কারণে ভুট্টার ফলন বেশী হয়। চলতি মৌসুমে কাজিপুরে সরকারি প্রণোদনার প্রায় ৩ হাজার ৮শ কৃষককে বিনামূল্যে ভুট্টার বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। সামনে কোন দূর্যোগ না হলে ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।তিনি আরও বলেন,রবি মৌসুমে সব রকম ফসলের পাশাপাশি এখন ভুট্টার আবাদ বাড়ছে।
এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হবে। এ মৌসুমে ভুট্টা চাষাবাদে কৃষি অফিস থেকে মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সঠিকভাবে কৃষকদের বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, তদারকি ও সহযোগিতা করেছেন। বিভিন্ন সময়ে প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের বিনামূল্যে সারও বীজ দেওয়া হয়েছে। এবার আশানুরুপ ফলন পাবে কৃষকরা।
